ভারতের কলকাতার সঙ্গে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের দূরুত্ব কম। আর এ শুল্ক স্টেশনে এ বছর আমদানি কমছে, বেড়েছে রপ্তানি; সেই সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আদায়। ফলে গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে পৌনে ৩০০ কোটি টাকা।
দিন দিন রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে এ বন্দরে আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বেনাপেল বন্দরের একটি কুচক্রীমহল সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভোমরা বন্দর ও বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর করা হয়।
দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ২৯ আগস্ট বেনাপোল বন্দরের ন্যায় দুধ ব্যতীত আমদানি করা সব পণ্যের অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা কাস্টমস ও কলকাতার দূরত্ব বেনাপোল বন্দর থেকে ৩৫ কিলোমিটার কম থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এ বন্দরের প্রতি বেশি আকৃষ্ট।
যে কারণে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দর ছেড়ে ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের দিকে ঝুঁকছেন। এখানে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরের মতো ফলের ট্রাক থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ডিজিটাল স্কেলে নিখুঁতভাবে পরিমাপ করে রাজস্ব নিধারণ করা হচ্ছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২১ হাজার ৬২৭টি এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৮০টি; যা গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানিকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৬৫%।
এছাড়া চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ি এসেছে ৬৩ হাজার ৯০২টি, যা গত অর্থবছরে ছিল ৮২ হাজার ২২৮টি। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা কম এসেছে ১৮ হাজার ৩২৬টি।
অপরদিকে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৯ হাজার ৯৫৫ টন এবং চলতি অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ২৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬২ টন; যা গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে আমদানিকৃত পণ্য কম হয়েছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরেই সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থান। দিনে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যসহ আবশ্যকীয় পণ্য ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য আমদানি হয়ে থাকে উক্ত স্থলবন্দর দিয়ে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতিদিন গড় ৫০ থেকে একশত পণ্যবাহী ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও ১ নম্বর সদস্য মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাগ্য খুলেছে। কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরটি সব থেকে কাছে হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ভোমরা বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই বন্দরের প্রতি আমদানি-রপ্তানিকারকরা ঝুঁকছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভিতর একটি কুচক্রীমহল এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে অচল অবস্থা সৃষ্টির জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
ত ২০ সেপ্টম্বর বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে ভোমরা বন্দরে অ্যানালগ স্কেলে পণ্যবাহী ফলের ট্রাকের ওজন পরিমাপের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির কথা বলে ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। যেখানে জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, জাতীয় গোয়েন্দা প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিজিএফআই ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল স্কেলে সব ধরনের পণ্য পরিমাপ করা হয়। কোনো আমদানিকারকের ওজন ফাঁকির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ভোমরার স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা (পরিক্ষণ) বাবলুর রহমান জানান, এ বন্দরে ফলের ট্রাকের ওজনসহ সব পণ্য পরিবহণের ওজন জাতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সবার উপস্থিতিতে ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।