বাংলাদেশে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ইএমএফএসএস প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছে ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ (ইউসিবি)। এখান থেকে ইকোনমিকস, ফাইন্যান্স ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ৩ বছরমেয়াদী গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশে বসেই বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জন এবং এর নানান দিক নিয়ে সম্প্রতি আমাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইউসিবির পরিচালক জারিফ মুনির। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ইএমএফএসএস প্রোগ্রামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক মুজিব মাসুদ।
প্রশ্ন: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ইএমএফএসএস কী ধরনের প্রোগ্রাম?
জারিফ মুনির: বিশ্বব্যাপী লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস (এলএসই) স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান যখন বিদেশে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, তখন একে বলা হয় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস এক্সটারনাল প্রোগ্রাম। একই প্রোগ্রাম, কিন্তু বিদেশের ক্ষেত্রে এক্সটারনাল শিক্ষা কার্যক্রম, পার্থক্য বলতে শুধু এটুকুই। এই প্রোগ্রামটি সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে আরও আগেই শুরু হয়েছে; এখন এই প্রোগ্রামটি বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের দেয়া কারিকুলামের ওপর শিক্ষাগ্রহণ করবেন। পাশাপাশি, এখানকার শিক্ষার্থীদের মার্কিং-ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মতো করে করা হবে। এমনকি যেসব শিক্ষককে এখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস তাদের নিয়োগও বাছাই করে দিচ্ছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের কথা হচ্ছে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেন কোনো পার্থক্য না থাকে। লন্ডনে বসে একজন শিক্ষার্থী যে মানের শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন, বিদেশে বসে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রেও যেন সেই একই মান বজায় থাকে। প্রোগ্রামটি শুধু এক্সটারনাল, বাকি সব একই।
প্রশ্ন: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অ্যাকাডেমিক ডিরেকশন বলতে কি বোঝায়?
জারিফ মুনির: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অ্যাকাডেমিক ডিরেকশন বলতে বোঝানো হয়, শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় দিক-নির্দেশনা এলএসই থেকে আসবে। যেমন বলা যায়, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের কারিকুলাম অনুযায়ী পড়াশোনা করবেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের মার্কিংও করা হবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মতো করে। আবার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস শিক্ষক বাছাই করে দিবে। মানে পুরো শিক্ষা কার্যক্রমটি তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে, এটিই লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অ্যাকাডেমিক ডিরেকশন।
প্রশ্ন: এখান থেকে ৩ বছরের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে শিক্ষার্থীরা কী পাবে?
জারিফ মুনির: এটি মূলত ৩ বছরের আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি। আপনি চাইলে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিও করতে পারেন। আপনি যদি এখানে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তাহলে ৪-৫ বছর লাগবে। কিন্তু এলএসই-তে আপনার পড়াশোনা ৩ বছরের মধ্যেই শেষ হবে। পাশাপাশি, যদি দেশে এমন কোনো সমস্যা হয়, যে দেশে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বা শেষ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাহলে তারা লন্ডন থেকে এক্সটারনালি নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আবার চাইলে লন্ডনে গিয়েও পড়াশোনা শেষ করতে পারবেন। তবে, আমাদের ইচ্ছা শিক্ষার্থীরা এখানে বসেই ৩ বছরের ডিগ্রি শেষ করুক। এখানে দুইটি বিষয় আছে। প্রথমটি হলো- এখান থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য লন্ডনে শতভাগ ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ থাকছে। আর দ্বিতীয়ত হলো, শিক্ষার্থীরা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে শতভাগ অ্যাকসেস পাবেন। যেমন: বইপত্র, শিক্ষক বা সামার স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের পুরো অ্যাকসেস পাবেন।
জারিফ মুনির: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই বাংলাদেশে বসে ডিজাইন করে। এক্ষেত্রে, আমাদের সিলেবাস ঠিক করছে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস, ঠিক ও-লেভেল, এ-লেভেলের মতো। আবার শিক্ষার্থীদের মার্কিং করার ক্ষেত্রে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাই মার্কিং করে থাকে। অপরদিকে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মার্কিং করবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস। আবার শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এখানে এই সুযোগ নেই, এখানে শিক্ষক বাছাই করে দিবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের এই প্রোগ্রাম একদমই আলাদা।
প্রশ্ন: কোন কোন বিষয়ে আপনাদের এই প্রোগ্রামটি চলবে? এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে শিক্ষার্থীরা কোথায় চাকরি করার সুযোগ পাবে?
জারিফ মুনির: আমরা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের এই প্রোগ্রামটি শুরু করছি ইকোনোমিকস, ফাইন্যান্স ও ম্যানেজমেন্ট বিষয় দিয়ে। আমরা দেখলাম এখানকার শিক্ষার্থীরা এখন এই বিষয়গুলো পড়তে চাইছে। যদিও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে ৯০টির মতো প্রোগ্রাম আছে, তারপরও শুরু করার জন্য এই ৩টি বিষয় ঠিক আছে বলে মনে হয়েছে আমাদের। আর তাছাড়া নিজেদের ক্লাস শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা যদি আরও স্পেশাল কোনো ক্লাস করতে চান, আমরা সেটাকে উৎসাহ দিবো। চাকরির ক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তাদের চাহিদা তৈরি হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা কেবল দেশেই চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ পাবে না, পাশাপাশি বিদেশের যেকোনো জায়গায় চাকরি করার সুযোগ পাবেন তারা।
প্রশ্ন: গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এখানকার শিক্ষার্থীরা কি বৈশ্বিক অ্যালামনাই নেটওয়ার্কের অংশ হতে পারবে?
জারিফ মুনির: এখানকার শিক্ষার্থীরা তো লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের শিক্ষার্থী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। ফলে এখান থেকে পড়াশোনা করার পর লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের বিস্তৃত অ্যালামনাইয়ের অংশ হয়ে যাবেন তারা। এতে করে শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হবে এবং দেশের বাইরে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যাবে। তারা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ডিগ্রি নিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
প্রশ্ন: এই ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কী দেশের বাইরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার জন্য যেতে পারবেন?
জারিফ মুনির: হ্যা অবশ্যই। এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে শতভাগ ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ। তারা পড়াশোনা চলা অবস্থাতেই চাইলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নেয়ার পর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রেও দেশের বাইরে পড়াশোনা করার সুযোগ ও সম্ভাবনা বেড়ে যাবে তাদের। এখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষার্থীরা চাইলে বাইরের যেকোনো দেশে পড়তে যেতে পারবেন।